Feb. 22, 2021, 9:14 p.m.
এএনই প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ ফেব্রুয়ারী।। রাজ্যের গরিব বিধবা মহিলাদের কন্যা সন্তানদের শিক্ষা ক্ষেত্রে সহায়তায় একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে মুখ্যমন্ত্রী সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ পাশাপাশি রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রগুলিতে পাঠরত শিশু ও তাদের মায়েদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহ বিভিন্ন সুুবিধা প্রদানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলি যথাযথভাবে রূপায়ণের ক্ষেত্রে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান জানান৷ আজ সচিবালয়ের ২নং সভাকক্ষে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব দপ্তরের কাজকর্মে সরকারের লক্ষ্য ও দিশা তুলে ধরেন৷ গরিব বিধবা মহিলাদের কন্যা সন্তানদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সহায়তায় রাজ্যের বিভিন্ন ক্লাব ও সামাজিক সংগঠনগুলিকে নিজ নিজ এলাকায় এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করতে তিনি দপ্তরের আধিকারিকদের পরামর্শ দেন৷ তিনি আরও বলেন, শিশু ও মহিলাদের অপুষ্টি ও রক্তাল্পতার হার আরোও কমানোর লক্ষ্যে দপ্তরকে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করতে হবে৷ রাজ্যের সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রগুলি থেকে শিশু ও মায়েরা সমস্ত পরিষেবা নিয়মিত পাচ্ছেন কিনা তা দপ্তরের আধিকারিকদের আরও আন্তরিক এবং নিষ্ঠার সঙ্গে তদারকি করতে হবে৷ প্রতিটি অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ এবং এল পি জি গ্যাস প্রদানে দপ্তরকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রের শিশুদের ইউনিফর্ম প্রদান করার বিষয়ে শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পরিকল্পনা তৈরী করার জন্যও বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সভায় সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব দীপা ডি নায়ার সর্বশেষ সভার পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, রাজ্যের প্রতিটি অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে পানীয় জলের ব্যবস্থা সুুনিশ্চিত করতে পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধান দপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ১১২৭টি অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ ইতিমধ্যেই ১৫৮টি অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ বাকীগুলিতে আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের কাজ চলছে৷ ২০২০-২১ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক রাজ্যে নতুন ২৩৪টি অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র স্থাপনের ম’রী প্রদান করেছে৷ এরজন্য প্রয়োজনীয় স্থানও চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ এছাড়াও ডোনার মন্ত্রক ২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাজ্যে আরোও ৫১টি নতুন অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে৷ চলতি অর্থবর্ষে ৩৩৯২টি অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে শৌচালয় মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ ইতিমধ্যেই ৫৪০টি অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রের শৌচালয় মেরামতির কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ এছাড়াও ঐ অর্থবর্ষে ৩৮৭৪টি আঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে এল পি জি গ্যাস সংযোগ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে৷ এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩০২টি অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে এল পি জি গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে পানীয় জলের সুুবন্দোবস্ত রাখার জন্য দপ্তরকে বিশেষ নজর দিতে হবে৷ অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রগুলিতে শিশুদের শারীরিক ব’দ্ধি পরিমাপ করার জন্য যে সমস্ত যন্ত্র দেওয়া হয়েছে তা রক্ষণাবেক্ষণের উপর গুরুত্ব দিতে দপ্তরের আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রতিটা অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে এল পি জি গ্যাস সংযোগ প্রদানের যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কার্যকর করার বিষয়েও দপ্তরকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সভায় সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব আরোও জানান, প্রধানমন্ত্রী মাত্র বন্দনা যোজনায় এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার ১৮৫ জন গর্ভবতী মহিলাকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে৷ ২০২০-২১ অর্থবর্ষের বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী অতি অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের প্রতি সপ্তাহে ৬ দিন ২০ গ্রাম করে গুড়, সপ্তাহে ৬ দিন ২০০ মিলিলিটার করে দুধ এবং সপ্তাহে ৬টি ডিম দেওয়ার কর্মসূচি চালু করা হয়েছে৷ এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী মাত্রপুষ্টি উপহার প্রকল্পে পোষণ কীট প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে দপ্তর৷ তিনি আরোও জানান, চলতি অর্থবর্ষে অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রের ৩ লক্ষ ২৫ হাজার ৪১৯ জন শিশুর আধার সংযুক্তিকরণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৭৯৮ জন শিশুর আধার সংযুক্তিকরণ করা হয়েছে৷ একশ শতাংশ শিশুকে আধার সংযুক্তিকরণের লক্ষ্যে ৫৬টি সি ডি পি ও অফিসে আধার এনরোলমেন্ট সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনাও নিয়েছে দপ্তর। সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব আরোও জানান, গার্হস্থ্য হিংসার শিকার মহিলা বা মেয়েদের সহায়তার জন্য প্রতিটি জেলায় ওয়ান স্টপ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে৷ বর্তমানে রাজ্যের পশ্চিম জেলায় একটি ওয়ান স্টপ সেন্টারের স্থায়ী ভবন রয়েছে৷ এছাড়াও ধলাই, খোয়াই, সিপাহীজলা এবং দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ওয়ান স্টপ সেন্টারের স্থায়ী ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে৷ ত্রিপুরা বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও কর্মসূচিও রাজ্যের ৭টি জেলায় রূপায়িত হচ্ছে৷ তিনি আরোও জানান, গোমতী এবং পশ্চিম জেলায় ৪৬৩ জন মহিলা পুলিশ স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করার অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷ এছাড়াও রাজ্যের বাকী জেলাগুলিতে ৪৩৪ জন মহিলা পুলিশ স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করার অনুমোদন চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে৷ তিনি জানান, রাজ্যে নতুন ৩০ হাজার জনকে ভাতা প্রদানের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার তা রূপায়ণে দপ্তর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে৷ এখন পর্যন্ত নতুন ১৮ হাজার ৯৬৫ জনের ভাতা প্রদানের মঞ্জুরী দেওয়া হয়েছে বলে দপ্তরের সচিব সভায় জানান৷ ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রকৃত সুুবিধাভোগীরা যাতে বি’ত না হন সে বিষয়ে দপ্তরকে গুরুত্ব দিতে মুখ্যমন্ত্রী সভায় বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন৷ তিনি নতুন ভাতা প্রাপক নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য পরামর্শ দেন৷